
তিন লাখ টাকার চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার ব্যবস্থা করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। শুধুমাত্র নাম সঠিক রেখে বাকি সব তথ্য গোপন করে উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকেই রোহিঙ্গাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং চোখের আইরিশে তৈরি করা হচ্ছে এনআইডি এবং পাসপোর্ট। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এ চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কয়েকদিন আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে আটক হয় রোহিঙ্গাভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র সদস্য আসাদুল্লাহ। মাত্র তিন মাসে চট্টগ্রামের পটিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি পাসপোর্ট পেয়ে যায় উখিয়ার থানার হত্যা মামলার এ আসামি।
এরপরই গোয়েন্দা পুলিশের টানা অভিযানে গ্রেফতার হয় এই চক্রের চার সদস্যসহ মোট ৬ জন। এর মধ্যে বাকি দু’জন রোহিঙ্গা। গ্রেফতারদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ৫টি পাসপোর্ট। মূলত নারায়ণগঞ্জের ঠিকানায় রোহিঙ্গাদের এসব পাসপোর্ট তৈরি হলেও ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং চোখের আইরিশ উত্তরা পাসপোর্ট অফিসেই নেয়া হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভেদে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তি করে পারভেজের নেতৃত্বাধীন চক্রটি। চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে তৈরি হয় জন্মনিবন্ধন। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট। সবশেষ পর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ভিসা নিয়ে বিমান বন্দরে পৌঁছে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গোয়েন্দা) মো. সোনাহর আলী বলেন, ‘চক্রের চট্টগ্রামে সদস্যরা রোহিঙ্গাদের তথ্য নিয়ে আসে। এবং ঢাকায় যে সদস্যরা আছে দালালের তারা পাসপোর্ট করিয়ে নিয়ে আসে।’
চার মাসে পারভেজ চক্র ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে অন্তত ১৫টি পাসপোর্ট তৈরি করেছে বলে স্বীকার করেছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ১৫ জনই উখিয়ার কতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় এখন পর্যন্ত উত্তরা পাসপোর্ট অফিসের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (গোয়েন্দা) রিপন কুমার দাস বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি অফিসের কেউ জড়িত আছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। সেটা তদন্ত করে জানা যাবে।’
৩ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী গ্রেফতার হলেও মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।