‘বুকের মধ্যে আগুন’ নিয়ে কোনো বিতর্ক হোক চাই না: হৈচৈ

অনেকটা নীরবেই মুক্তি দেয়া হলো সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হৈচৈতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি।

আট পর্বের এই সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু জানুয়ারিতে টিজার রিলিজের পরপরই এটা নিয়ে আপত্তি ওঠে। দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। টিজার রিলিজের সময়ই জানানো হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের একজন আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেতার মৃত্যুরহস্য নিয়েই এই সিরিজ। যে রহস্য উন্মোচন করেন প্রধান চরিত্র অপূর্ব। যাকে দেখা গেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মামুন চরিত্রে। ওই সময়ই অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ২৭ বছর আগে মারা যাওয়া নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য ও পরিবারের নানা টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘বুকের মধ্যে আগুন’।

টিজার মুক্তি ও সিরিজটি নিয়ে পরিচালকদের বয়ানে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, এটি নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহর জীবনী নিয়েই নির্মাণ।

যদিও শুরু থেকেই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন সিরিজটির পরিচালক তানিম রহমান অংশু, প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হৈচৈ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি সিরিজটি মুক্তি না দিতে আইনি নোটিশ পাঠায় নায়ক সালমান শাহর পরিবার। তার মা নীলা চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিরিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা চাই না এটা মুক্তি পাক।’

এ কারণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিরিজটি মুক্তিতে পিছিয়ে আসে হৈচৈ। অবশ্য তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিছু কাজ বাকি আছে তাই পিছিয়েছে। এর মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখের ১৫ দিন পর কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তি দেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হৈচৈ বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই না বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হোক। আমরা একটা কনটেন্ট নির্মাণ করেছি। সেটা কনটেন্ট হিসেবেই মুক্তি দিতে চাই। এটা নিয়ে বিতর্ক বা সমস্যা হোক, সেটা চাইনি।’

প্রচার ছাড়া মুক্তি প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত প্রচার করেছি। আমাদের ফেসবুক পেজে গেলেই দেখবেন প্রচার চলছে। তবে আমরা নির্দিষ্ট তারিখ বলিনি যে কবে রিলিজ করব। এটা তো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত। তারা এভাবেই মুক্তি দিতে চেয়েছে বলেই দিয়েছে।’

এদিকে আইনি জটিলতা এবং সালমান শাহর পরিবারের পাঠানো আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে হৈচৈয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কোনো আইনি নোটিশ পাইনি। পরিচালক পেয়েছেন। তবে নোটিশের জবাব আইনিভাবেই দেয়া হবে। আর সিরিজটি নির্মাণের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত। সবার মতামত নিয়েই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে সিরিজটি মুক্তির পর থেকে অনেকেই দাবি করছেন, এটা সালমান শাহর জীবনী নিয়েই নির্মিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে চলছে আলোচনা। অনেকেই সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে সালমান শাহ এবং তার আশপাশের চরিত্রগুলোর মিল খুঁজে পাচ্ছেন। যেমন, খোদ সালমান শাহর আদলে তৈরি আরমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান। তার স্ত্রীর (সামিরা) মতো অবিকল দেখা গেছে তমা মির্জাকে।

মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে মিলিয়েছেন আরেক অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদকে। রাজনীতিবিদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গেটআপে তৌকীর আহমেদ। চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চরিত্রে দেখা গেছে বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খানকে। তবে সালমান শাহর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। সিরিজে শাহানাজ সুমির করা চরিত্রের সঙ্গে অনেকেই শাবনূরের মিল খুঁজে পেয়েছেন।

সিরিজটির পর্বগুলোর নামকরণ করা হয়েছে ‘ফিরে আসার গল্প’, ‘বন্ধু নাকি শত্রু’, ‘চেনা যখন অচেনা’, ‘স্নেহের ছলনা’, ‘উত্থান-পতন’, ‘প্রণয়ের পালাবদল’, ‘পতনের প্রস্তুতি’, ‘হত্যা নাকি আত্মহত্যা?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *