
লিভারপুলের গোল ততক্ষণে পাঁচটি হয়ে গেল। যেন দেজা ভ্যু! গত মৌসুমেই তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে গিয়ে পাঁচ গোল দিয়ে জিতেছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। কিন্তু ম্যাচের তখনো মিনিট ১৫ বাকি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের লজ্জা আরও বাড়ানোর এ সুযোগ লিভারপুল সমর্থকেরা ছাড়বেন কেন!
অ্যানফিল্ডের গ্যালারিতে আওয়াজ উঠল – ‘উই ওয়ান্ট সিক্স!’
৮৩ মিনিটে সে চাওয়াও পূর্ণ! খাকপো আর নুনিয়েসের দেখাদেখি ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন সালাহও। কিন্তু তখনো তো অন্তত ৭ মিনিট বাকি, অ্যানফিল্ড গ্যালারিও মজা পেয়ে গেল! এবার আওয়াজ – ‘উই ওয়ান্ট সেভেন!’
কী আশ্চর্য! লিভারপুলের জার্সিতে সবাই কি আলাদিনের চেরাগের দৈত্য-টৈত্য হয়ে গেলেন নাকি! ৮৮ মিনিটে আবার ম্যান ইউনাইটেডের জালে বল! গোল কার? দুদিন আগেই ‘এই মৌসুম শেষেই লিভারপুলে শেষ’ জানিয়ে ক্লাবটার সমর্থকদের আবেগে ভাসানো ফিরমিনোর।
ইউনাইটেড ভাগ্য মানতে পারে, এরপর আর ‘উই ওয়ান্ট এইট’ আওয়াজ তেমন জোর পায়নি গ্যালারিতে। তবে যা হয়েছে, তাতেই রেকর্ড বইয়ে ওলট-পালট। ম্যাচ শেষে স্কোরলাইনটা এমন দাঁড়াল যে, বারবার চোখ কচলে দেখতে বাধ্য হতে হয় – লিভারপুল ৭: ০ ম্যান ইউনাইটেড!
ইউনাইটেডের ইতিহাসে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বড় হারের রেকর্ড ছোঁয়া হয়ে গেছে। আগের রেকর্ডটাও কোন সময়ের দেখুন না! সেই ১৯৩০-এর আশপাশে! ১৯২৬ থেকে ১৯৩১ – এই ছয় বছরে তিনবার ব্ল্যাকবার্ন, অ্যাস্টন ভিলার পর উলভারহ্যাম্পটনের কাছে ৭-০ ব্যবধানে হেরেছিল ইউনাইটেড।
লিভারপুলের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় জয় তো আছেই, এই মৌসুমেই লিগে অ্যানফিল্ডে বোর্নমাউথকে ৯-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ক্লপের দল। তবে কাল ধারাভাষ্যকার যেমন বলছিলেন, লিভারপুলের জন্য ‘এই ৭-০ যেকোনো ক্লাবের বিপক্ষে নয়, এটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে’, রেকর্ডবইও সেটির সাক্ষ্য দিচ্ছিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটিই লিভারপুলের সবচেয়ে বড় জয়।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে পাল্টা আক্রমণের পর বাঁ দিক থেকে ঢুকে কোদি খাকপোর দারুণ গোলে এগিয়ে যাওয়া লিভারপুলের, এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ফুটবলের পাশাপাশি ছেলেখেলা করেছে ইউনাইটেডকে নিয়ে। ৪৭ মিনিটে দারউইন নুনিয়েসের হেডে দ্বিতীয় গোল। তিন মিনিট পর আবারও ডান দিক দিয়ে ভয়ংকর পাল্টা আক্রমণে উঠে মো সালাহ পায়ের নাচনে চক্কর খাইয়েছেন ইউনাইটেডের আর্জেন্টাইন সেন্টারব্যাক লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে, এরপর তার থ্রু ধরে দুর্দান্ত চিপে ম্যাচে খাকপোর দ্বিতীয় গোল। ইউনাইটেডের ম্যাচে ফেরার বিশ্বাস আর নিজেদের ক্ষমতায় গর্ব ওই এক গোলেই চুরমার।
লিভারপুলের নতুন আক্রমণত্রয়ীতে দুই সঙ্গীকে জোড়া গোল পেতে দেখলেন, আর সালাহ কি চুপ করে থাকবেন? ৬৬ মিনিটে পাকেচক্রে বল পেয়ে নুনিয়েস পাস বাড়ালেন সালাহর দিকে, বাঁ পায়ের ভলিতে সালাহর স্কোরশিটে নাম ওঠানো। গ্যালারিতে তখন ‘উই ওয়ান্ট সিক্স’ আওয়াজ।
সালাহ গ্যালারির আশা পূরণ করে দিলেন ৮৩ মিনিটে। পাঁচ মিনিট পর বদলি নামা ফিরমিনোর গোলে রাতটাতে অ্যানফিল্ডে যেন সপ্তম স্বর্গের সুখ!
এ জয়ে লিভারপুলের সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেয়ার আশা আরও জোর পেল। ২৫ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট ক্লপের দলের, এই মুহূর্তে তারা আছে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে। চারে থাকা টটেনহ্যামের পয়েন্ট ২৬ ম্যাচে ৪৫। অবশ্য ছয় নম্বরে থাকা নিউক্যাসল ২৪ ম্যাচে পেয়েছে ৪১ পয়েন্ট। সাতে থাকা ফুলহ্যামের পয়েন্ট ২৫ ম্যাচে ৩৯, তবে ২৩ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে থাকা ব্রাইটনও এবার সেরা চারের দৌড়ে থাকা দলগুলোর মাথাব্যথার কারণ।
এমন হারের পর ম্যান ইউনাইটেডের অবশ্য ক্ষতিবৃদ্ধি বলতে, লিগ শিরোপার দৌড়ে থাকার যে ক্ষীণ আশা ছিল, তা আরও ক্ষীণতর। পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরেই আছে এরিক টেন হাগের দল, ২৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪৯। দুই নম্বরে থাকা ম্যান সিটি এক ম্যাচ বেশি খেলে ইউনাইটেডের চেয়ে ৯ পয়েন্ট এগিয়ে।