
বিপিএলটা তার একেবারে খারাপ কাটেনি। বিশেষ করে শেষদিকে এসে তো দারুণ ছন্দেই ফিরেছিলেন, তার দলও শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের সামনে পড়তেই যেন খেই হারিয়ে ফেললেন লিটন দাস।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তার ব্যাটে রান তো ছিলই না, আউট হওয়ার ধরনও অবাক করেছে। প্রথম ম্যাচে পুরোটা সময়ই তাকে দেখে মনে হয়েছে, অস্বস্তিতে আছেন। ব্যাটে বলেই ঠিকমতো হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ৭ রান করে ওকসের বলে এলবিডাব্লিউ হয়েছিলেন। পরের ম্যাচে অস্বস্তিতে ছিলেন কি না, তা বলার মতো সময়ই পাওয়া যায়নি। প্রথম বলেই আউট!
তবে মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে যেভাবে স্যাম কারেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বাতাসে আলস্যে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছিলেন, আজ চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ঠিক একইভাবে আউট লিটন! এবারও রান ০, ‘উন্নতি’ বলতে এবার ইনিংসের স্থায়ীত্ব দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়ে দুই বল বেশি!
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচেও সেভাবে রান না পাওয়া লিটনের তাই সর্বশেষ পাঁচটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে মিলিয়ে রান ৪৩ – এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে করেছেন ২৯।
প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে সিরিজ খোয়ানো বাংলাদেশ আজ চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট নেয়ার পর ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটনকে হারিয়েছে। পঞ্চম বলে দলকে ১ রানে রেখে আউট লিটন। ১৩ বল পর ফিরে গেছেন তামিমও, দলের রান তখন মাত্র ১৭। ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটের ওপরের দিকের কানায় লেগে বল গেছে পয়েন্টে।
লিটনের মতো তামিমও আউট স্যাম কারেনের বলে। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশকে শুরুতেই নাড়িয়ে দিয়েছে কারেনের সুইং আর বাউন্স। তবে বল কিছুটা নিচু হয়ে আসা একটু ধীর পিচে এরপর বাংলাদেশের ইনিংস পুনর্গঠনের দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করছিছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। দৃষ্টিকটু রানআউটে শান্ত আউট হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে এসেছে ৯৮ রান।
শান্তর পর মুশফিকও তুলে নিয়েছেন ফিফটি। দুজনের ইনিংসের ধরন একই – শুরুতে একেবারে দেখেশুনে ক্রিজে কিছুটা সময় পার করা, তারপর সিঙ্গেল-ডাবলসের ফাঁকে ফাঁকে বাউন্ডারি। মজার ব্যাপার, দুজন ফিফটিও ছুঁয়েছেন ঠিক ৬৯ বলে।
দুজনের জন্য এই ইনিংস দুই রকম মাহাত্ম্য নিয়েও আসছে। শান্ত বিপিএলের ফর্মটাই এই সিরিজে টেনে এনেছেন। প্রথম ম্যাচের পর আজ তৃতীয় ম্যাচেও পেয়েছেন ফিফটি। ৭১ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করেছেন। ব্যাটিং অর্ডারের তিনে জায়গা অনেকটা পোক্ত করার স্বস্তি তার।
আর মুশফিক রান পেলেন অনেকদিন পর। গত আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৫২ রানের পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৭ ম্যাচে একবারই মাত্র বিশের ঘরে যেতে পেরেছেন মুশফিক। তার ফর্ম নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছিল। চট্টগ্রামে আজ সেদিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন মুশফিক।
দুজনের ইনিংসে ধৈর্যের প্রশংসাও করতে হয়। তামিম আউট হওয়ার আগে স্যাম কারেনের বলকে একবার সীমানার বাইরে পাঠানো শান্ত তামিম আউট হওয়ার পর প্রায় ৮ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারেননি। তামিম আউট হওয়ার সময় তার রান ছিল ৯ বলে ৫, আর ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে আর্চারকে নিজের দ্বিতীয় বাউন্ডারি মারার আগে তার রান ছিল ৩১ বলে ১০।
মুশফিকও শুরু করেছেন ধীরে। সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে স্যাম কারেনকে প্রথম চার মারার আগে তার ইনিংসে প্রথম ১৪ বলে রান ছিল ৪। তবে এরপর মুশফিক মূলত ‘টার্গেট’ করেছেন ইংল্যান্ডের পেসার আর অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রেহান আহমেদকে, আর শান্তর টার্গেট ছিলেন মূলত আরেক ইংলিশ স্পিনার মঈন আলী।
তার প্রমাণ দেবে স্কোরকার্ড। কারেন আর আর্চারকে প্রথম দুই চার মারার পর শান্ত’র ইনিংসে পাঁচ চারের বাকি তিনটি মঈনের বলে। আর মুশফিক এ পর্যন্ত ইনিংসে ছয়টি চার মেরেছেন, তার চারটি আর্চার (৩) আর কারেনের বলে, বাকি দুটি রেহানের বলে। স্পিনের ক্ষেত্রে দুজনেরই সুইপ আর রিভার্স সুইপের ব্যবহার বেশি চোখে পড়েছে।
ফিফটির পর মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে শান্ত রানআউট হয়ে গেলেও এই প্রতিবেদন লেখার সময় মুশফিক ব্যাটিং করছেন ৮৪ বলে ৬৭ রানে। ক্রিজে তার সঙ্গী সাকিবের রান ১৬ বলে ১১। বাংলাদেশের রান ৩০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৪।
রানরেট পাঁচের কাছাকাছি, উইকেট হাতে আছে ৭টি। ১৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলের জন্য মন্দ নয়।